ছোট পুঁজিতে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা শুরু করার উপায়

এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চান? এক্সপোর্টইম্পোর্টব্যবসা কিভাবে করা যায় আজ আপনাদের সাথে সে সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়।

ছোট-পুঁজির-বড়-ব্যবসা-এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট-ব্যবসা
বর্তমানে বিশ্বে এটি গ্লোবালাইজেশনের ফলে এই ব্যবসাটি অনেক জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠেছে। এ ব্যবসাতে সফল হতে হলে ব্যবসায়ীকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

পেজ সূচিপত্র:ছোট পুঁজির বড় ব্যবসা- এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা কি

এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসা হলো একটি দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বিদেশে পাঠানো বা নিয়ে আসা। এক্সপোর্ট এর মাধ্যমে কোন দেশ নিজের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। আর ইম্পোর্ট এর মাধ্যমে বিদেশের একটি প্রয়োজনীয় পণ্য নিজেদের দেশে আনা এবং তা বাজারজাত করার পদ্ধতি।

বিশ্বায়নের ফলে এই যুগে ব্যবসা বাণিজ্য আর ছোট কোনো অবস্থানে নেই। এটি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য কেনাবেচার যুদ্ধ শুরু গেছে। আর এই অংশে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও। তারাও এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা করে অধিক মুনাফা আয় করছেন। আর বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কারনে খুব সহজে এই ব্যবসা সহজেই করতে পারবেন।

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা কেনো গুরুত্বপূর্ণ

এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসা যেমন একটি ব্যবসায়িক এর জন্য অন্যতম লাভজনক ব্যবসা তেমনই এই ব্যবসা একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে। এর ফলে দুটি ভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। কোনো পণ্য এক্সপোর্ট করে একটি দেশ হতে অন্য দেশকে সেবা বা পণ্য দেওয়া হয় যা সে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করে।

আবার ধরুন প্রতিটি দেশে সব ধরণের পণ্য তৈরি হইনা। যেমন আমাদের দেশের কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য এর অভাব রয়েছে। সেটি অন্য আরেকটি দেশে বিপুল পরিমাণে তৈরি হয়। তবে তারা পণ্যটি আমাদের কাছে এক্সপোর্ট করবে। আর আমাদের দেশ সেটি অর্থ দিয়ে ক্রয় করবে যাকে বলা হবে ইম্পোর্ট। যা এই ২টি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের প্রধান এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট পণ্য কি

বাংলাদেশ মূলত রপ্তানিমুখী একটি দেশ। আর এক্সপোর্ট করে যখন পণ্যটি সে দেশে প্রয়োজনের বেশি উৎপাদিত হয় এবং তারা এই পণ্যটি এক্সপোর্ট করে এমন একটি দেশে যাদের এই পণ্যটির অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট পণ্যের মধ্যে প্রধানত নিম্নলিখিত জিনিসগুলো রয়েছেঃ

এক্সপোর্ট পণ্যঃ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এক্সপোর্টপণ্যগুলি হলোঃ নীট ওয়্যার, ওভেন পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি পণ্য, পাঁট ও পাঁটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কটন ও কটনপণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ।
ইম্পোর্ট পণ্যঃইম্পোর্ট পণ্যগুলি হলোঃ কম্পিউটার, তুলা, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, যানবাহন, প্লাস্টিক, তেল।

এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসার নিয়ম

এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসার জন্য প্রথমে মূলত আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে যে আপনি কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন। এমনকি আপনাকে এটাও জানা লাগবে দেশে কোন পণ্যের ঘাটতি রয়েছে এবং কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলে আপনি বেশি লাভবান হবেন। এক্ষেত্রে যারা নিয়মিত আমদানি করে থাকেন তাদের সাথে আপনার যোগাযোগ করতে হবে।

ছোট পুঁজির বড় ব্যবসা- এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা
তারপর যারা পণ্য এক্সপোর্ট করে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে। বিশ্বের আলিবাবা ও আমাজন নামের অনেক বড় বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস আছে যাদের থেকে আপনি পণ্য ক্রয় করে ইম্পোর্ট করতে পারেন অথবা যদি নিজে নিজেই এলসি করতে চান তবে আপনাকে একটা আমদানি লাইসেন্স করতে হবে।

কিভাবে এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ব্যবসা শুরু করবেন

এক্সপোর্টইম্পোর্টব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। কি পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করবেন, কোন বাজার লক্ষ্য করেব্যবসাকরবেন তা নিয়ে একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। অবশ্যই এইব্যবসাশুরু করার পূর্বে আইনি অনুমোদন এবং নিবন্ধন করতে হবে। তারপর আপনাকে নির্বাচন করতে হবে যে আপনি কোন পণ্য নিয়েআমদানি বা রপ্তানি করবেন।

এরপর আপনাকে দেখতে হবে আপনার পণ্যটির চাহিদা কোন দেশে বেশি এবং আপনার এই প্রতিযোগিতামুলক বাজারে টিকে থাকার কৌশল নির্ণয় করতে হবে। বৈদেশিক বাইয়ার ও সাপ্লায়ার এর সাথে আপনার যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আবার প্রতিটি দেশের শুল্ক ও কাস্টমস নিয়ম আলাদা তাই সে ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান রাখা প্রয়োজন।

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি

কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আমাদের জানা উচিত সেটি হোক এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা কিংবা অন্য লোকাল ব্যবসা। কিন্তু এই এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা সম্পর্কে আপনাদের ভালো করে সবকিছু জেনে এবং খোঁজ নিয়ে শুরু করা উচিত। চলুন তবে জেনে আসি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিঃ

১. সঠিক ধারণা থাকাঃ যারা ব্যবসাতে নতুন তাদের সব চেয়ে সমস্যার বিষয় হলো সে ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা। অনেকে মনে করে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা করতে অনেক পুঁজির প্রয়োজন। তবে না আপনি কম পুঁজি (১-৫ লক্ষ) দিয়েও এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা করতে পারবেন। আপনি এই স্বল্প পুঁজিতে নির্ভয়ে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা শুরু করে স্বল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বড় একজন ব্যবসায়ী হতে পারবেন। যেহেতু ব্যবসা আপনার তাই আপনি নিজেই নিজের বস, সিদ্ধান্ত ও আপনার নিজের তাই এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত আর পরিকল্পনা করলে আপনাকে ঠেকাই আর কে?

২.পণ্য এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টে যে দেশ সবচেয়ে নিরাপদঃ বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বাইরের দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে দেশে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে। চীন থেকে পণ্য আমদানি করা অনেক সহজলভ্য ও নিরাপদ। চীন থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করায় যেমন ঝুঁকি কম তেমনি অনেক লাভজনক।

৩. এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসাতে বাজেটঃ অবস্থাভেদে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসাতে বাজেট করা উচিত। আপনি যদি নতুন ব্যবসায়ী হন তাহলে কম পুঁজিতে অর্থাৎ ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে শুরু করবেন।

৪. এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ যারা ব্যবসা করার পরিকল্পনা করছেন তারা ভাবছেন কি করে বাইরের দেশে যোগাযোগ করবো। ধরুন আপনি চীনের সাথে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তাহলে আপনাকে জানতে হবে,
যোগাযোগ করবেন কিভাবে?, পেমেন্ট করবেন কিভাবে?, সঠিকভাবে পণ্য আনবেন কিভাবে?, পণ্যের মূল্য জানবেন কিভাবে?

আর কতো জটিলতার বিষয় আছে। তবে কোনো ভয় নেই। এই এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের হয়ে কাজ করছে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রতিষ্ঠান ডোরপিং ডটকম।

তরুণ-তরুণীদের জন্য এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা

তরুণ-তরুণীদের জন্য এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা একটি বড় সুযোগ হতে পারে। বাংলাদেশে উদ্যমী তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন প্রজুক্তি নির্ভরব্যবসা গড়ে তুলেছে,এক্সপোর্টইম্পোর্টব্যবসাএর মধ্যে অন্যতম।এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা করতে পারে কারণ আমরা আগেই জেনে আসছি যে অল্প পুঁজিতে ভালো পরিমাণের মুনাফা আয় করা যায় এই ব্যবসাতে।

ছোট পুঁজির বড় ব্যবসা- এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা
তবে কোনো ব্যবসা করার জন্য অনেক ধৈর্য ধারন করা উচিত। একদিনেই কেউ ভালো ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারেনা।এই ভালো পরিমাণের মুনাফা কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে আরো বড় করে তোলা সম্ভব। যদি তারা সঠিক নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা শুরু করতে পারে তারা নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।

যেহেতু ব্যবসা তাদের তাই তারা নিজেরাই নিজেদের বস এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেরা নিজেদের সুন্দর ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে পারবে। তাই আমি মনে করি এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা তরুণ-তরুণীদের জন্য দারুন একটা ব্যবসা আইডিয়া হতে পারে। এ ব্যবসায়ে সাধারণত ঝুঁকি কম থাকে আর মুনাফা বেশি থাকে। তাই চাইলে তারা নির্ভয়ে এই বব্যবসা শুরু করতে পারেন।

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা একটি স্বাধীন ব্যবসা। একটি দেশের সকল চাহিদা কখনো সেই দেশটি একা পরিপূর্ণ করতে পারবেনা। তাই এই পৃথিবীতে মানুষ যতদিন আছে ততদিন এই এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা চলতেই থাকবে। তাছাড়া এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আর নতুন অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরি হয়েছে।

সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চললে এই এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা নিয়ে আপনি অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন।আন্তর্জাতিকবাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারলেএই দেশের ব্যবসায়ীরানিজেদের উন্নতির সাথেদেশকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমেসমৃদ্ধ করবে।এছাড়া এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে যে ভবিষ্যতে বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করবে।

ছোট পুঁজিতে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা শুরু করার উপায় নিয়ে আমাদের শেষ কথা

এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা মূলত এমন একটি ব্যবসা যা খুব কম পুঁজিতে শুরু করে ভালো একটি ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই আপনি যদি সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চলে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসা করেন তাইলে আপনার ভবিষ্যতে বড় কিছু করার আশা আছে। তাই এই ব্যবসা যে কেউ চাইলেই শুরু করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এই ব্যবসা করে নিজেদের ক্যারিয়ার যেমন উজ্জ্বল করছেন তেমনই তাদের লাইফস্টাইল ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যদি ভেবে থাকেন নিজের জন্য ভালো কিছু করবেন তবে দেরি না করে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যবসা শুরু করুন এবং নিজেকে স্বাবলম্বী করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে ব্লগার অ্যাকাউন্ট খুলবো?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url