চুলের যত্নে শিকাকাই এর ব্যবহার - শিকাকাই এর ৫টি উপকারিতা
চুলের যত্নে শিকাকাই এর ব্যবহার ও শিকাকাই এর উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চেয়ে থাকেন তবে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। আমরা আপনাকে শিকাকাই এর ৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে চুলের যত্নে শিকাকাই এর ব্যবহার, শিকাকাই এর উপকারিতা ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তবে দেরি কিসে? চলুন জেনে নেই,
পেজ সূচিপত্র:
- শিকাকাই কি
- শিকাকাই দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করার পদ্ধতি
- চুলে শিকাকাই দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু যেভাবে ব্যবহার করবেন
- শিকাকাই দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি ও ব্যবহার করার পদ্ধতি
- চুলে শিকাকাই ব্যবহার করার উপকারিতা
- আমাদের শেষ কথা
শিকাকাই কি
বহু যুগ আগে থেকে ভারতীয় উপহাদেশের নারীরা চুলের যত্নে শিকাকাই এর ব্যবহার করে আসছে। শিকাকাই গুড়া যাকে হেয়ার ফ্রুট ও বলা হয়। শিকাকাই এ আছে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে, প্রোটিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের যত্নে অনেক উপকারী। আবার এতে রয়েছে স্যাপোনিন যার জন্যে এটি পানির মধ্যে দিয়ে নাড়ালে শ্যাম্পুর মতো ফেনা তৈরি করে। এই জন্যে শিকাকাইকে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ও বলা হয়।
শিকাকাই দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করার পদ্ধতি
আগেই আমরা জেনেছি যে শিকাকাইকে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু বলা হয়ে থাকে। এই শিকাকাই এর সাথে রিঠা যোগ করে আপনি একটি শ্যাম্পু বানাতে পারবেন। আমরা তো এতোক্ষণ শুধু শিকাকাই সম্পর্কে জানলাম। তবে রিঠা সম্পর্কে ও কিছু তথ্য আপনাদের দেই।
রিঠা হলো কিছুটা বরই এর মতো দেখতে। একে ইংরেজিতে Soapnut বলা হয়। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে পরিষ্কারের কাজে এটি বড় ওস্তাদ। একে পানিতে মিশালে এতটাই ফেনা হয় যে আস্ত লেপ, কাথা কেচে ফেলা যায়। যায় হোক তবে চলুন শ্যাম্পু তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নেই,
- প্রথমে কিছু পরিমাণ শিকাকাই ও রিঠা নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন যতক্ষন না এগুলো নরম হয়। ( আপনার চুল যদি বেশি রুক্ষ হয় তবে শিকাকাই এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন আর রিঠার পরিমাণ কমিয়ে দিবেন )
- তারপর এটিতে আরো কিছু পরিমাণ পানি যোগ করে অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিট সিদ্ধ করুন।
- এবার দেখুন ফেনা তৈরি হয়েছে। হয়েছে কি? ফেনা তৈরি হলে এটিকে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। তারপর ঠান্ডা হতে দিন।
- ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনি এখন পানিটাকে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এই শ্যাম্পুটিকে আপনি এখন চাইলে ১ সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলে শিকাকাই দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু যেভাবে ব্যবহার করবেন
শিকাকাই ও রিঠা দিয়ে তৈরি শ্যাম্পুটি হলো ভেষজ শ্যাম্পু, যাতে কোনো কেমিক্যাল নেই। তাইলে অবশ্যই এটি আপনার চুলের জন্য অনেক উপকারী। শ্যাম্পু কিভাবে বানাতে হয় সেটা তো আমরা জানলাম। এবার চলুন জেনে নেই কিভাবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করবে।
- প্রথমে আপনার চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিবেন।
- তারপর আমাদের তৈরি করা এই শ্যাম্পু এর লিকুইডটি চুলে নরমাল শ্যাম্পু এর মত ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলব।
- প্রথমে চুলে ফেনা কম হবে তাই বলে অতিরিক্ত লিকুইড চুলে দিবেন না। এতে রিঠা চুলকে শুষ্ক করে দিবে অনেক।
- মাথায় যদি তেল ব্যবহার করে থাকেন তবে যতক্ষন না তেল চুল থেকে যায় ততক্ষন এই প্রসেসটি অনুসরণ করতে থাকবেন।
এভাবে আপনি আপনার শ্যাম্পু তৈরি করে ব্যবহার করলে আপনার চুল হবে মসৃণ ও ঝলমলে।
আরো পড়ুনঃ ব্লগার অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলবো?- ব্লগ তৈরির পদ্ধতি
শিকাকাই দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি ও ব্যবহার করার পদ্ধতি
শিকাকাই শুধু শ্যাম্পু তৈরিতে না, হেয়ার প্যাক তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। তাইলে বুঝতে পারছেন চুলের যত্নে এর ব্যবহার বলে শেষ করা যাবেনা। আমরা মেয়েরা সপ্তাহে একটা দিন রাখি চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করার জন্যে। চলুন একটি হারবাল হেয়ার প্যাক বানানো আপনাকে শিখিয়ে দেই যা ঠিক মতো ব্যবহার করে আপনি সুন্দর চুলের অধিকারী হবেন।
- পরিমাণমতো শিকাকাই গুড়া+ তার অর্ধেক পরিমাণ আমলকি গুড়া মিশিয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর তা চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে ভালো করে লাগান। ৩০-৪০ মিনিট মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল শক্ত ও ঝলমলে হবে। এবং এটি চুল পেকে যাওয়া থেকে রোধ করবে।
- শিকাকাই গুড়া+ রিঠা+ আমলকি গুড়া পানি দিয়ে ভিজিয়ে পরের দিন সেই পানিটি ভালোভাবে ছেকে নিবেন। এবং সেই পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করবেন। তবে এতে কিন্তু ফেনা হবে না কিন্তু চুল ভালো পরিষ্কার হবে।এতে খুশকিও দূর হবে।
- আরো ভালো হয় যদি ২ চামচ শিকাকাই গুড়া+ ২ চামচ রিঠা+ ২ চামচ আমলকি গুড়া একসাথে পানিতে মিশিয়ে চুলায় ১৫-২০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। যখন পানিটি ফেনা ফেনা হয়ে যাবে তখন পানিটি ছেকে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করুন। এই পানি আপনি ফ্রিজে রেখে ৭-১০ দিন নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারবেন। আবার বাইরে রাখতে চাইলে ৩-৪ দিন এটি ঠিক থাকবে।
- চুলের সাথে শিকাকাই গুড়া শরীরের ত্বকে ব্যবহার করাও উপকারী। ভাতের মাড়ের সাথে শিকাকাই গুড়া মিশিয়ে শরীরে ম্যাসেজ করুন। পার্থক্যটি আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন।
চুলে শিকাকাই ব্যবহার করার উপকারিতা
আমরা তো সবাই এটা ভালো করেই জানি যে, কেমিক্যালযুক্ত জিনিস এর থেকে কেমিক্যাল বিহীন ব্যবহার করা আমাদের শরীর বা ত্বক/ চুলের জন্য অনেক উপকারী। যেহেতু শিকাকাই একটি প্রাকৃতিক একটি উপাদান তাইলে নিশ্চয়ই এর উপকারিতা বেশি হবে তাইনা? জ্বি আসলেও তাই। ব্যবহার পদ্ধতি তো জানলাম চলুন তাইলে জানি এর উপকারিতা আসলে কি।
- প্রথমতো এটি একটি কেমিক্যাল বিহীন উপাদান।
- এটি চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ করে।
- চুলের গোড়া শক্ত করে।
- বাজেট ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ খুব কম খরচে এটি দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করা সম্ভব।
- রেগুলার ব্যবহার করলে নরমাল শ্যাম্পু কন্ডিশনার কেনার প্রয়োজন পড়েনা।
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- যাদের চুলে খুশকি ও উকুনের সমস্যা আছে তাদের এই সমস্যাগুলো দূর করে।
- রেগুলার ব্যবহার করতে থাকলে চুল আস্তে আস্তে স্ট্রেইট করে দেই।
- এটি চুলকে মসৃণ করে দেই। অর্থাৎ এটি চুলকে ডিপ কন্ডিশনিং করে।
আমাদের শেষ কথা
তাইলে বুঝা গেলো যে আমাদের জন্য চুলে শিকাকাই এর ব্যবহার খুবই উপকারী। তবে এর খারাপ দিকটি হলো শ্যাম্পু বানানোর প্রসেসটা অনেক সময়সাপেক্ষ। আবার প্রসেসটা অনেক মেসিও বলতে পারেন। তাই প্রথম প্রথম আপনার এটি বানাতে বিরক্ত লাগতে তো পারে। তবে এটি ব্যবহারের পর যখন আপনি দেখবেন আপনার সুন্দর ঝলমলে চুল আবার আপনার চুল পড়া ও কমে গেছে তখন আপনার আর বিরক্ত লাগবে না তবে দেরি কিসে? আজ হতেই আপনার চুল সুন্দর করুন- শিকাকাই এর গুণে!
মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url