সানবার্ন দূর করার ১০টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
সানবার্ন দূর করার কার্যকরী ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি জানতে আগ্রহী বলেই এই পোস্টটি পড়তে এসেছেন। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ফলে শরীরের খোলা অংশ কালো হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরে বেরোনোর সময় সানব্লক ক্রিম বা ছাতা ব্যবহার করতে। কিন্তু এতো কিছু করেও সানবার্ন হয়ে যায়! তাহলে করণীয় কি? চলুন জেনে নেই বাসায় বসে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে সানবার্ন দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করবেন।
পেজ সূচিপত্র:
- সানবার্ন দূর করার জন্য আইসকিউবের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য শসার রসের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য টমেটোর ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য আলুর ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য বেসনের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য পেঁপের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য নারিকেল তেলের ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য দই এর ব্যবহার
- সানবার্ন দূর করার জন্য মসুরের ডালের ব্যবহার
- হাত-পায়ের সানবার্ন দূর করার উপায়
- সানবার্ন দূর করার জন্য আরো কয়েকটি উপায়
- আমাদের শেষ কথা
সানবার্ন দূর করার জন্য আইসকিউবের ব্যবহার
তীব্র গরমে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য আইসকিউব এর বিকল্প কিছু
নেই। সানবার্ন ঠিক করতে মুখকে আদ্র রাখা অনেক জরুরি। আইসকিউব ব্যাবহার করলে
মুখের জ্বালাপোড়া যেমন কমাবে তেমন মুখে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি
মুখের লোমকুপে ধুলাবালি ঢুকতে বাঁধা দেই। কেমন করে ব্যবহার করবেন এই আইসকিউব?
চলুন জেনে নেই,
- রোদে পোড়া থেকে তাৎক্ষণিক রক্ষা পেতে আইসকিউব ব্যবহার করুন।
- প্রথমে একটি পাতলা সুতি কাপড়ে আইসকিউবটি রেখে মুখে কম্প্রেস করুন।
- এমনকি শরীর যেই অংশ খোলা থাকে (যেমন: হাত,পা) সেখানে ব্যবহার করলেও এটি ব্যবহার করে দেখুন ভালো ফল পাবেন।
- আপনি চাইলে একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে তাতে আইসকিউব মিশিয়ে নিন। সেই ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষন মুখ চুবিয়ে রাখুন। ত্বক এর জ্বালাপোড়া কমার সাথে সাথে ত্বকে উজ্জ্বলতা ও বৃদ্ধি পাবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার
অ্যালোভেরাতে থাকে এন্টি - ফ্ল্যামেটরি ও এন্টি - ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের
ব্রণ দূর করার সাথে সাথে মুখে পোড়াভাবও দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা থেকে
এর জেলটি বের করে আপনি সেটার আইসকিউব তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে নিঃসংকোচে অনেক
ভালো ফল পাবেন। এমনকি অ্যালোভেরা জেলের সাথে ভিটামিন - ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে
লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন।
#তবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হবেন যে অ্যালোভেরা আপনাকে সুট করে
কিনা বা এটি ব্যবহার করে আপনার ইচিং সমস্যা হয় কিনা। এমন সমস্যা দেখা দিলে
অ্যালোভেরা প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।
সানবার্ন দূর করার জন্য শসার রসের ব্যবহার
শসার ৯০ শতাংশের বেশি পানি, তাই গরমে ত্বকের জন্য এই ফল অনেক ভালো। আর এটি অনেক
সহজলভ্য একটি সবজি। মুখে শসা ব্যবহার করলে সেটি ত্বককে আদ্র রাখতে সহায়তা করে।
এতে রয়েছে ভিটামিন এবং অনেক খনিজ পদার্থ যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আপনি কি
জানতেন শসা ব্যাবহার করেও রূপচর্চা করা যাই? চলুন তাইলে ব্যবহার পদ্ধতি জেনে নেই,
- প্রথমে শসাকে ধুয়ে নিয়ে এর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
- তারপর এটিকে কুচি কুচি করে কেটে ব্লেন্ডারে বা হাতে চেপে পিষে নিতে হবে।
- এরপর শসার রসটি সরাসরি মুখে কম্প্রেস করতে হবে।
- আপনি যদি শসার রসটি দিয়ে দিয়ে আইসকিউব বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে চান তবে সেটিও করতে পারবেন।
- শসার ব্যবহার আপনার সানবার্ন থেকে রক্ষা করবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য টমেটোর ব্যবহার
রোদে পোড়া বা সানবার্ন থেকে রক্ষা পেতে টমেটো এর বিকল্প নেই। তবে সমস্যা
তো একটাই, টমেটো একটি শীতকালীন সবজি তাইনা? সমস্যা নেই এখন বারোমাসই
টমেটো চাষ হচ্ছে। এটি একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে। টমেটোতে আছে
ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি যা রোদে পোড়া থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে এবং এটি
ত্বকের লালচে ভাবো দূর করে।
- টমেটো এর সাথে বাটার মিল্ক মিশিয়ে সেটি মুখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বকের রোদে পোড়া কালো দাগ ঠিক করতে এবং ত্বকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন: চুলের যত্নে শিকাকাই এর ব্যবহার - শিকাকাই এর ৫টি উপকারিতা
সানবার্ন দূর করার জন্য আলুর ব্যবহার
আলুতে রয়েছে ভিটামিন - সি যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং
ক্যাটেকোলেস নামক এনজাইম আছে যা রোদে পোড়া দাগ এবং হাইপারপিগমেন্টেশন সমস্যা দূর
করতে সাহায্য করে। যে স্থানে রোদে পোড়া কালো দাগ রয়েছে সেই স্থানে আলু টুকরো
করে কেটে আলতোভাবে মেসেজ করুন। এই পদ্ধতি সপ্তাহে ২-৩ দিন করুন। আস্তে আস্তে
আপনার ত্বকের সব পোড়া দাগ চলে যাবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য বেসনের ব্যবহার
সানবার্ন দূর করার জন্য আপনারা বেসনের ব্যবহারও করতে পারেন। আমরা জানি বেসনে
মুখের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে তবে এটি সানবার্ন দূর করতেও সাহায্য কওরে। এক চামচ বেসনের সাথে হাফ চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আপনি
চাইলে এতে মধুও দিতে পারেন। এই পেস্টটি আপনার মুখে এপ্লাই করে ৫-১০ মিনিট
রাখুন।
তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আলতো ভাবে ধুয়ে তুলে ফেলুন।
সানবার্ন দূর করার জন্য পেঁপের ব্যবহার
সানবার্ন দূর করার জন্য পেঁপে অনেক উপকারী।
একটি বাতিতে প্রয়োজন মতো পেঁপে চটকে তার সাথে মধু মিশিয়ে মুখে এবং
শরীরের রোদে পোড়া স্থানে মাখিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বক কোমল ও মসৃণ করবে সাথে
রোদে পোড়া ভাবও কমাতে সাহায্য করবে।এই পদ্ধতি সপ্তাহে ২-৩ দিন করুন। আস্তে
আস্তে আপনার ত্বকের সব পোড়া দাগ চলে যাবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য নারিকেল তেলের ব্যবহার
সানবার্ন দূর করতে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
একটি টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে সেটি মুখে এবং
শরীরের রোদে পোড়া অন্যান্য স্থানে এপ্লাই করুন।
১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর উষ্ণ গরম পানিতে তা ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল
পেতে সবচেয়ে দুই থেকে তিনবার এ পদ্ধতি ফলো করুন। আস্তে আস্তে আপনার ত্বকের সব
পোড়া দাগ চলে যাবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য দই এর ব্যবহার
দই প্রাকৃতিক এক্সপোলেটর এবং ময়াস্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ মুখে দই
ব্যবহার করলে মুখে আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে যার ফলে সানবার্ন কমায় এবং
ত্বকের কালো ছোপ উঠাতে সাহায্য করে।
দইয়ের সাথে এক চিমটি হলুদ ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবং এই পেস্টটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল
পেতে সবচেয়ে দুই থেকে তিনবার এ পদ্ধতি ফলো করুন। আস্তে আস্তে আপনার ত্বকের সব
পোড়া দাগ চলে যাবে।
সানবার্ন দূর করার জন্য মসুরের ডালের ব্যবহার
ত্বকের পড়া ভাব এবং মৃত কোষ দূর করতে মসুরের ডাল ব্যবহার করতে পারেন।
এক চামচ মসুরের ডাল বাটার সঙ্গে হাফ চামচ কফি এবং দুই চা চামচ দুধ মিশিয়ে
ফেসপ্যাক তৈরি করুন।
সেই ফেসপ্যাক টি মুখে এপ্লাই করে পাঁচ থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর দুই
মিনিট ঘষে ঘষে মালিশ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে রুটি ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের
শুষ্কতা দূর হবে এবং কালো পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
হাত-পায়ের সানবার্ন দূর করার উপায়
শুধু মুখে যত্ন নিতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই হাত ও পায়ে সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত।
কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, আমাদের হাত ও পায়ের উপর দিয়ে কম ধকল যায় না। এই
তীব্র রোদে আমাদের মুখের সাথে শরীর যেই অংশ খোলা থাকে (যেমন: হাত,পা) কালো ও
খসখসে হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের মুখের সাথে হাত ও পায়ের সামঞ্জস্য থাকছে না। তা
এটি অবশ্যই দৃষ্টিকটু লাগবে তাইনা? চলুন তবে জেনে নেই কি করে হাত-পায়ের যত্ন
নিবেন,
একটি বড় বালতিতে কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে শ্যাম্পু, বেকিং সোডা, লেবুর রস
মিশিয়ে তাতে পা চুবিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট তারপর আলতো ভাবে হাত-পা মাসাজ করুন।
তারপর আপনার পছন্দ মতো উপরিউক্ত কোন প্যাক হাত-পায়ে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে
ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে লেবুর সাথে টুথপেস্ট ও একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে হাত-পায়ে
লাগিয়ে মাসাজ করতে পারেন। অনেক ভালো ফল পাবেন।
তাই দেখা যাচ্ছে হাত ও পায়ে সানবার্ন দূর করার জন্য আলাদা কোন পদ্ধতি ব্যবহার
করা লাগবে না। উপরিউক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো আপনি মুখের সাথে যদি হাত ও পায়ের
ব্যবহার করেন তাহলে হাত-পায়ের পোড়া দাগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই যদি মনে
করেন হাতও পায়ের যত্ন নেওয়া কষ্টদায়ক তবে সেটি ভুল। আপনি আপনার একই সঙ্গে
মুখের ত্বকের সাথে হাতও পায়ের যত্ন ঠিকই নিতে পারবেন।
সানবার্ন দূর করার জন্য আরো কয়েকটি উপায়
সানবার্ন দূর করার জন্য শুধু ঘরোয়া পদ্ধতি না কিছু জিনিস মেনে চলা উচিত। নাহলে
যতই যত্ন নেই না কেন আমাদের ত্বকের পোড়া ভাব কমাতে পারবোনা। তাহলে চলুন জেনে
নেই সেই উপায়গুলো,
- এই গরমে আমাদের শরীরে থেকে ঘাম বের হয়ে যাওয়ায় শরীরে পানির অভাব হয়। শরীরে পানির অভাব হওয়ার জন্য ত্বকের আদ্রতা ও কমে যায়। আর এ ত্বকে আদ্রতা কমে গেলে ত্বক প্রাণহীন ও খসখসে হয়ে যাবে। তাই প্রচুর পানি পান করুন। এর ফলে আপনার ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে এবং রোদে ত্বক কুঁচকে যাওয়া থেকেও রক্ষা করবে।
- সর্বদা হাত-পা ঢেকে এবং ছাতা বা ক্যাপ পড়ে মুখ রোদ থেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করবেন। আর খোলামেলা টাইপার জামা কাপড় পড়ার চেষ্টা করবেন। আঁটসাঁট পোশাক না পড়াই উত্তম। কারণ এটি তা তাপ আটকে রাখে এবং জ্বলনের সৃষ্টি করে।
- আর সর্বদা মুখে SPF- 50 এবং হাত ও পায়ে SPF-30 এর এর ভাল ব্র্যান্ডের সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করবেন। সর্বদা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার চেষ্টা করবেন। গোসলের পর ত্বক সম্পূর্ণ না মুছে আদ্র ভাব রাখতে দেবেন।এবং প্রতিবার মুখ ও হাত- পা ধোয়ার পর ময়াস্চারাইজার ব্যবহার করবেন এতে আপনার ত্বক আর্দ্র থাকবে।
- রোদে ত্বক পোড়ার কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এই ফুসকুড়ি গুলো খোঁচানো ঠিক নয়। এতে মুখে কালো দাগের সৃষ্টি হবে যা অবশ্যই দৃষ্টিকটু।
আমাদের শেষ কথা
আমাদের দেশের গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫° ছুই ছুই হয়। যার ফলে আমাদের
জীবনযাত্রার সাথে ত্বকেরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সকলের কাছে পার্লারে
যেয়ে সে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই উপরে বিশ্লেষিত ঘরোয়া উপায়ে এ
পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি ঘরে বসেই নিজের ত্বকে যত্ন নিতে পারবেন। তবে এ
পদ্ধতিগুলো সাধারণ তথ্যের জন্য, কোন চিকিৎসা নয়। যদি আপনার সমস্যা অনেক জটিল
হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিন।
মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url