ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ
ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ খুঁজছেন কিন্তু খুঁজে বের করা একটি বেদনাদায়ক কাজ।
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না কি গাছ লাগাবেন । ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ
লাগানো জরুরি। আপনার ছাদের সঠিক ব্যবহার করতে ছাদ বাগানে যেসব গাছ লাগাতে পারেন
টা জানতে পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন।
সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সামিল করতে চাচ্ছেন তাঁদের কষ্ট কিছুটা লাঘব
করতে চাচ্ছি। আপনাদের ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত কিছু গাছ এর কথা জানাবো এবং এর
পরিচর্যা সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো। তার আগে বলে নি
কি কি বিষয়ে কথা বলবো
পেজ সূচিপত্র:
- ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত ফুল গাছ
- বছর জুড়ে ছাদ বাগানে ফুল
- টবে কি কি গাছ লাগানো যায়
- ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত সবজি
- ছাদে ফলের বাগান
- ছাদ বাগান করার পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- ছাদে বাগান করলে ছাদের কোনো ক্ষতি হয়
- ছাদ বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম
- আমাদের শেষ কথা
ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত ফুল গাছ
ছাদ বাগান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ জায়গা স্বল্পতার কারণে গাছ এর সংখ্যা
কমে যাচ্ছে অথচ গাছ আমাদের প্রকৃত বন্ধু। গাছ আমাদের ফুল-ফল, খাদ্য, জ্বালানি
দেয়। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন এবং শীতল ঠান্ডা বাতাস দেয়। যা ছাড়া
প্রাণ অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না। পশুপাখি, মানুষ সকলেই অক্সিজেন পায় এই গাছ
থেকেই। তবুও গাছ ও বন কেটে জনবসতি এলাকা তৈরী করছি।
বর্তমানে আমরা অনেকেই সচেতন হচ্ছি
এবং অনুভব করছি যে গাছ এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নতুনভাবে নগরায়নের জন্য ছাদ
বাগান করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ছাদে (ঢাকা শহরে)। ছাদে ফুল ফুটে
থাকলে দেখতে কার না ভালো লাগে । যে সকল ফুলের গাছ আমরা ছাদে লাগাতে পারি
সেগুলির একটি তালিকা রেখেছি । আমি নিজে আমার বাড়ির ছাদে যে সব ফুলের গাছ লাগিয়েছি।
- সেগুলি হলো: গোলাপ, গাঁদা, সন্ধ্যামালতি, রজনীগন্ধা, বেলি, ডালিয়া, বিভিন্ন প্রজাতির বাগান বিলাস, টগর। এছাড়াও নার্সারি তে আরো অনেক ধরণের ফুলের গাছ পাওয়া যায় যা আপনারা আপনাদের পছন্দের মতো নিয়ে আসতে পারেন। আপনারা চাইলে এই গাছ গুলো লাগিয়ে আপনাদের ছাদের সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে পারবেন।
বছর জুড়ে ছাদ বাগানে ফুল
ফুল আমাদের কার না পছন্দ। আর সেই ফুল যদি আমাদের বাড়ির ছাদে সারা বছর ফুটে থাকে
তাহলে বলেন তো কতই না ভালো লাগবে। সেরকমই সারাবছর ফুটে থাকে এমন কিছু ফুল ও এর
যত্ন সম্পর্কে জানাতে চায়। তাহলে আপনারাও আপনাদের ছাদের বাগানে ১২ মাস ফুল
দেখতে পাবেন। সারাবছর ফুটে থাকে এমন ফুলের সংখ্যা অনেক। যেমন জবা, কামিনী, গোলাপ,
সন্ধ্যামালতি, টগর, নয়নতারা, পর্তুলিকা, মর্নিংগ্লোরী, রঙ্গন, বাগানবিলাস
ইত্যাদি।
এই সকল ফুল আপনারা আপনাদের বাড়ির ছাদে কিংবা আপনার বাড়ির বারান্দা তেও
লাগাতে পারেন। এসব গাছ এর তেমন যত্ন লাগেনা। নিয়মিত গেছে পানি দিতে হবে।
রাসায়নিক সার এর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে খেয়াল রাখবেন যেন গেছে পানি না জমে
থেকে। অতিরিক্ত রোদে রাখবেননা। দরকারে ছায়ায় রাখুন। দেখবেন ১২মাস আপনার গাছে
ফুল থাকবে।
টবে কি কি গাছ লাগানো যায়
ছাদ বাগানে আমরা আমাদের পছন্দের গাছে গুলা মূলত টবেই লাগিয়ে থাকি। তাই এই
সম্পর্কে জানাটা জরুরি। কিছু কিছু বড় গাছে আছে যা টবে হয়না। প্রায় সকল প্রকার
গাছই এখন টবে হয়। ফুল-ফল, শাক-সবজি, পাতাবাহার ইত্যাদি। গাছ অনুযায়ী গাছের টব
(সাইজ) নির্ধারণ করতে হবে। বাহারি সাইজে (ইঞ্চি) পাওয়া যায় এই টব। যদি বেশি ছোট সাইজের টব হয় তাহলে গাছের
শিকড় ঠিক মতো মাটির মধ্যে বাড়তে পারে না।
আবার যদি বেশি বড় টব লাগানো হয়
সেক্ষেত্রেও সমস্যা। কারণ শিকড় যখন বেশি জায়গা পাবে তখন গাছ বাড়তে সময় লাগবে
আবার গাছ লম্বা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে পরিচর্যায় সমস্যা হতে
পারে। তাই ফুলের টবের ক্ষেত্রে ছোট সাইজের টব(৬-৮ ইঞ্চি) গুলি ব্যবহার করা উচিত। যদি
বড়ো গোলাপ গাছ কিংবা স্থায়ী গাছে হয় সেক্ষেত্রে মাঝারি টব (১০ ইঞ্চি) গুলি
ব্যবহার করা উত্তম।
- আর ফলের গাছ যেমন ধরুন লেবু, মালটা, আম, বেদানা এসব গাছের জন্য একটু বড়ো টব বা ড্রামে লাগানো ভালো। অনেকে বালতি তেও গাছ লাগান। এভাবে টবে গাছে লাগাতে হবে।
ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত সবজি
শহুরে জীবনে পর্যাপ্ত রোদ পেতে হলে আমাদের ছাদে যাওয়া প্রয়োজন। তাই অনেকে এখন
ছাদে শখ ও প্রয়োজন মিটাতে সবজি চাষ করে থাকেব। উপযুক্ত সবজি এবং এর বীজ সংগ্রহ
করে গাছে লাগাতে হবে। পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস থাকায় ফলন ভালো হয়। ছাদে সব ধরণের সবজি চাষ করা যায়। অল্প সময়ে চাষ করার জন্য ভালো হলো লালশাক,
পালংশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক। আবার একটু সময় এর সবজি বেগুন, টমেটো, বরবটি, সীম,
কুমড়া ইত্যাদি। এইসব সবজি বাঁশ এর মাচার ওপর ভালো হয়।
ছাদে ফলের বাগান
শখ ও প্রয়োজন এর তাগিদে শহুরে মানুষ নিজের বাড়ির ছাদে বাগান তৈরী করছে। আগে
একটা সময় মানুষ শুধু ফুলের গাছ ছাদে রোপন করতো ও পরিচর্যা করতো। কিন্তু
অবিশ্বাস করলে চলবে না যে বর্তমানে ছাদেও সকল প্রকার ফলের গাছ চাষ হচ্ছে। ছাদে আমরা বিভিন্ন প্রজাতির বারো মাসি আম গাছ (বারি আম ১১, থাই আম কাটিমন লাগাতে পারি। এছাড়াও ভালো জাতের আম গাছ গুলি আমরা আমাদের ছাদে লাগাতে পারি।
তবে ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে আমাদের ১২মাসি আমের দিক এই যাওয়া ভালো। এগুলি ভালো
ফলন দেই। বছরে 3বার ফল হয়। আম ছাড়াও আমরা ছাদে চেরি ফল লাগাতে পারি। বেদানা মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরি,
ড্রাগনের গাছ লাগাতে পারি। ড্রাগন র স্ট্রবেরি আমাদের সকলেরই খুব প্রিয় ফল। আর
এই ফল গুলোর দাম বাজারে অনেক বেশি। এগুলো চাষ করা তেমন কঠিন নয়। তাই আপনি চাইলে এসব গাছ লাগাতে পারেন।
স্ট্রবেরি ও ড্রাগনের গাছের ফলন বেশি চাইলে এবং দ্রুত ফলন চাইলে গাছে বেশি আলো
প্রদান করতে হবে এবং এই গাছ কিন্তু পানি তেমন পছন্দ করেনা। গাছের গোড়ায় পানি
জমতে দেওয়া যাবে না। গাছের মাটিতে অল্প অল্প পানি দিতে হবে। এভাবে করে আপনি
গাছের ফলন ভালো পাবেন।
ছাদে বাগান করার পদ্ধতি ও পরিচর্যা
ছাদে বাগান করতে হলে ছাদ কে গাছ এর উপযোগী করতে হবে। সেক্ষেত্রে গাছ লাগানোর
জন্য আপনারা ছাদের পাশে যে বাউন্ডারি থাকে সেখানে তার পাশে দিয়ে আরেকটা কংক্রিট
এর ঢালাই দিয়ে মাঝে ফাঁকা একটি স্থান তৈরী করে নেওয়া যায়। তারপর ফাঁকা স্থানে
মাটি পূরণ করে বেড তৈরী করে নিতে হবে। মাটিতে গোবরসার ১০%, ভার্মি কম্পোস্ট এবং
কোকোপিট ২০% করে দিতে হবে। এর পর মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এই পদ্ধতি একটু ব্যায়বহুল তাই এই পদ্ধতি অনেকে করতে চাই না। এরকম করা সম্ভব না
হলে জিও ব্যাগ এর মধ্যেও বাগান কর যায়। এই ব্যাগ পরিবেশ বান্ধব তাই গাছের কোনো
সমস্যা হয়না। আর এছাড়াও অনেকে ড্রাম কেটে ড্রামের মধ্যে গাছ লাগান। আবার ছোটো ছোটো গাছের জন্য বোতল কেটেও আপনি গাছ লাগাতে পারেন। এগুলির
যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনারা গাছ লাগাতে পারেন। এটাই ছাদে বাগান করার
পদ্ধতি ও পরিচর্যা।
ছাদে বাগান করলে ছাদের কোনো ক্ষতি হয়
ছাদে বাগান করলে ছাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না যদি আপনি কয়েকটি বিষয় মাথায়
রাখেন। তা না হলে আপনার বাসার ছাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্রমাগত
ভেজা কাদা মাটি ও পানির কারণে ছাদ রসে যেতে পারে। পোকা মাকড় দেখা যেতে
পারে। এবং সিলিং এর সিমেন্ট ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছাদে বাগান করার পূর্বে কিছু নিয়ম কানুন যেনে নিন এবং ছাদ কে সুরক্ষিত রাখুন।
- সরাসরি ছাদের ওপর বেড তৈরী করা যাবে না।
- নিচে একটু ফাঁকা স্থান রাখতে হবে।
- চাইলে টব এর নিচে ইট রেখে ফাঁকা জায়গা করতে পারেন।
- কোথাও পানি জমে রাখা যাবেনা। পানি নিঃকাশন ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে। মূল কথা ছাদ ভেজা রাখা যাবেনা ।
ছাদ বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম
ছাদ বাগানের মাটি প্রস্তুত এর সময় মাটিতে কিছু খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন তাহলে গাছ
বেড়ে উঠতে পারবে তাড়াতাড়ি। গাছ শুধু লাগালেই হবে না এর যত্ন তাও তো নেওয়া আমাদের উচিত। নাইলে বাগান ঠিকই করতে পারলেও গাছ সুস্থ ও ভালো হবে না। অল্পতেই মারা যাবে বা ফলন ভালো হবেনা। তাই আমাদের উচিত গাছে নিয়ম মাফিক সার দেওয়া। কি নিয়মে সার ব্যাবহার করতে হয় টা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
- গাছের মাটিতে ২০% কোকোপিট ও ভার্মি কম্পোস্ট দিন । এর পর এক চা চামচ সাদা ইউড়িয়া, পটাশ, হাড়গুড়া এবং এগ শেল পাউডার দিয়ে ভালোমতো মিশিয়ে নিন। এর পর প্রত্যেক মাসে অল্প একটু করে সব গুলা সার মাটিতে ছিটিয়ে দিন। এবং বেশি করে পানি মিশিয়ে দিন।
- সরিষার খৈল পানিতে মিশিয়ে ১সপ্তাহ পর সেই পানির ১মগ পানি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মাসে একবার দিয়ে দিতে হবে।তাহলে গাছ সতেজ থাকবে। এছাড়া যদি সার না থাকে তাহলে সবজির খোঁসা গুলি শুধু মাটিতে মিশিয়ে ১মাসের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ১মাসে জৈব সার তৈরী হয়ে যাবে এবং পরবর্তী তে গাছের মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
গাছ আমাদের প্রিয় বন্ধু। শহুরে অঞ্চল ও জনবসতি বেশি হওয়ার কারণে গাছ কেটে ফেলতে
হচ্ছে। তাইলে এখন আমাদের সকলের উচিত বাড়ির ছাদে ছোট করে বাগান করা।গাছ লাগানো
এবং গাছের পরিচর্যা করা। গাছ ই পারে প্রাণী জগৎ টিকিয়ে রাখতে। আসুন আমরা গাছ
লাগাই। ছাদে বাগান তৈরী করি । নিজের ছোট্ট একটা বাগানের ফল খায়।
মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url