কোমর ব্যথা কেন হয় জানেন? আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজের কারণে কোমর ব্যথা
হতে পারে যা একটা সময়ে হয়ে ওঠে অসহনীয়। তবে কিছু সহজ উপায় মেনে
চললে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সহজ উপায়ে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করব। তবে
পূর্বেই বলে রাখি এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে
বলা। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কোমর ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো দৈনন্দিন
জীবনযাত্রার অভ্যাস। আমরা প্রায় অনেকেই এই ব্যথায় ভুগে থাকি। কোমর ব্যথার মূল
কারণগুলো হলো: দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকা, ভুল ভঙ্গিমাতে বসা বা
চলাফেরা করা, ভারী জিনিস তোলা, অসুস্থতা, ওজন বৃদ্ধি এবং বয়স বৃদ্ধির কারণে কোমর
ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবার আপনি যদি খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করেন তবে মাংসপেশি ও লিগমেন্টে অতিরিক্ত চাপ
পরে। যার ফলে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন কোমরের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে
যা ব্যথার কারণ হতে পারে। আবার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় যা
কোমরের জয়েন্টে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং যার ফলে কোমর ব্যথা দেখা দেয়।
কোমর ব্যথার সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং প্রতিটি কারণে জন্য বিভিন্ন
চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে হতে পারেঃ
১. বয়সের প্রভাব ২. ওজন বৃদ্ধি ৩. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ৪. মাংসপেশির দুর্বলতা ৫. হাড়ের সমস্যা ৬. আঘাত বা দুর্ঘটনা ৭. স্নায়ুর সমস্যা
কোমরের দুই পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ কি
কোমরের দুই পাশে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে দুই পাশে ব্যথা মূলত কোনো
অসুস্থতার জন্য হয়। হাড়ের সমস্যা যেমন: সায়াটিকা, স্পাইনাল স্টেনোসিস অথবা
কিডনির সমস্যার জন্য কোমরের দুই পাশের ব্যথার কারণ হতে পারে। চলুন আপনাদের সাথে
এই রোগগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করি,
সায়াটিকা: সায়াটিকা হলো মূলত সায়াটিক নামক নার্ভের উপর চাপ যা কোমরের
দুই পাশে যে ব্যথার সৃষ্টি করে থাকে। স্পাইনাল স্টেনোসিস: স্পাইনাল স্টেনোসিস এর ফলে মেরুদণ্ডের হাড় সংকীর্ণ
হয়ে যায়। এতে নার্ভের উপর চাপ পরে যার ফলে কোমরের দুই পাশে ব্যথা করে। কিডনির সমস্যার: কিডনির সমস্যার কারণেও কোমরের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে।
কিডনি বিকল বা কিডনিতে পাথর হলে এই ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। মাংসপেশির টান: কোমরের দুই পাশে ব্যথা হলে এটি সাধারণত মাংসপেশী
টানের কারণে হয়ে থাকে। ভারী বস্তু তোলার সময়, ব্যায়ামের সময়
ভুলবশত ভুল পজিশনে ব্যায়াম করলে কিংবা দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকলে
মাংসপেশীতে প্রাণ করতে পারে, এটি একটি কারণ হতে পারে কোমরের পাশের ব্যথা
সৃষ্টি করার।
কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ
কোমর ব্যাথা সাধারণত কোমরে নিজের অংশে অনুভূত হয়। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে
পারে এবং কখনো কখনো পায়ের দিকে প্রসারিত হতে পারে। যদি ব্যথার সাথে সাথে
জ্বর বা ওজন কমা বা বেশি দুর্বলতা থাকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা লক্ষ্মণ হতে
পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোমর ব্যথা কিসের কিসের লক্ষণ হতে পারে এবং প্রাথমিক
চিকিৎসা বা প্রাথমিক ধাপ কি নেওয়া যেতে পারে সেটি জেনে নেই
জ্বর এবং কোমর ব্যথা: কোমর ব্যথার সাথে যদি জ্বর থাকে তাহলে তা কোন
সংক্রমণ বা প্রধানের ইঙ্গিত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যত দ পরামর্শ
নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলা করলে হতে পারে পরবর্তীতে বড়
কোন সমস্যার সম্মুখীন করা লাগবে। ওজন কমে যাওয়া: কোমর ব্যাথা সাথে যদি অস্বাভাবিক ওজন কমে
যায়, তবে তা ক্যান্সারের মত গুরুত্ব লক্ষণ হতে পারে। ভয় পাবেন না
আমি সাধারণ একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আপনার শুধু এটি নাও প্রযোজ্য হতে
পারে। তাই ভালো হয় এমতাবস্থায় আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সেই
অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টেস্ট করান। মাংসপেশির দুর্বলতা: যদি কোমর ব্যথার সাথে সাথে
পায়ের মাংসপেশিতে দুর্বলতা অনুভব হয় তবে তা স্নায়ুর সমস্যা
লক্ষ্মণ হতে পারে। রাত্রে এক্ষেত্রে গরম পানির শেক দিলে কিছুটা
উপশম পাওয়া যায়। অবহেলা না করে পরামর্শ নেয়াই ভালো বুদ্ধিমানের কাজ
হবে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কেন হয়
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা প্রায় মহিলাদের ভোগান্তির
কারণ হয়ে থাকে। এই কোমর ব্যথার অনেক কারণ হতে পারে। তবে প্রধানত যে সকল
কোমর ব্যথা হয় সেগুলি হল,
হরমোনের পরিবর্তন
ওজন বৃদ্ধি
মেরুদন্ডের অতিরিক্ত চাপ
শরীরের কেন্দ্রস্থল পরিবর্তন
বাচ্চার অবস্থান ইত্যাদি
গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন বেড়ে যায় ফলে মাংসপেশি এবং
জয়েন্টগুলো প্রভাব পড়ে।বিশেষ করে র রিলাক্সিন হরমোনটি পেলভিক
এরিয়ার জয়েন্ট গুলিকে শিথিল করে দেয় যার কারণে স্বরূপ হতে পারে কোমর
ব্যথা।
ছাড়াও ওজন বৃদ্ধি নিজের কেন্দ্রস্থল পরিবর্তনের কারণেও হতে পারে কোমর ব্যথা।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ওজন বৃদ্ধি পায় যা মেরুদন্ডের এর ওপর চাপ
সৃষ্টির অন্যতম কারণ। আবার শিশুর অবস্থানের ও ওজনের ফলে শরীরের কেন্দ্রস্থল
পরিবর্তন হয়ে যায়। এর ফলে সৃষ্টি হয় কোমর ব্যথা।
কোমর ব্যাথা নির্ধারণের উপায়
কোমর ব্যথা সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য কিছু টেস্ট করা
প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক
পরীক্ষা। ডাক্তার প্রথমে রোগীর ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করেন অর্থাৎ ব্যথার সময়কাল, অবস্থান, তীব্রতা এবং ব্যথার সঙ্গে
অন্যান্য লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চান।
এরপর তিনি শারীরিক পরীক্ষা করেন যেমন মাংসপেশি, জয়েন্ট এবং
স্নায়ু অবস্থার উপর ভিত্তি করে তিনি এই পরীক্ষাগুলি করেন। এবং এর উপর
ভিত্তি করে তিনি সমস্যার ধরন নির্ধারণ করে সমাধান করেন। প্রথম
ধাপে সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে এইভাবে সমস্যার সমাধান করা না গেলে
অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়।
অন্য পদ্ধতি ক্ষেত্রে হতে পারে তা ইমেজিং টেস্ট বা ল্যাবরেটরি
টেস্ট। ম্যাচিং টেস্ট বলতে তোমার কাছে নির্ধারণের জন্য অনেক সময়
ডাক্তারেরা এক্স-রে বা এমআরআই করতে দেন। এর মাধ্যমে মেরুদন্ডের
হাড়, ডিস্ক কিংবা স্নায়ুর অবস্থায় স্পষ্টভাবে দেখা যায় ফলে
এগুলোর কোন সমস্যা থাকলে তা সহজে নির্ধারণ করে সমাধান করা যায়।
ল্যাবরেটরি টেস্ট এর ক্ষেত্রে ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা বা ইউরিন টেস্টের
মাধ্যমে কিডনি বা সংক্রমণ সম্পর্কিত সমস্যা আছে কিনা করতে পারেন। এসব
পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় হলে সঠিক
চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
কোমর ব্যাথা সরানোর সহজ উপায়
কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সহজ উপায় হয়েছে, যা আপনি বাড়িতে থেকেই
করতে পারেন। কিছু উপায় রয়েছে যা মেনে চলবে আর ব্যাথা অনেকটাই কমে
যাবে। তা ছাড়াও কোমর ব্যথা না থাকলেও যদি আপনি এই গুলি মেনে চলেন তবে
পরবর্তীতে আপনার ব্যথা হবে না। চলুন দেখি নি সেই উপায় গুলি।
সঠিক ভঙ্গিমায় বসা
নিয়মিত স্ট্রেচিং
নিয়মিত ব্যায়াম করা
বিনিময় দাঁড়ানো এবং চলা
ভারী বস্তু না তোলা
ভারী বস্তু তোলার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা
বেশি ঝুঁকে কাজ না করা
শীতল কিংবা উষ্ণ পানির প্যাক ব্যবহার করা
ব্যথা কমানোর জন্য মেসেজ করা
উষ্ণ গরম তেল দিয়ে মৃদুভাবে মালিশ করা
এছাড়াও রয়েছে ওভার দ্যা কাউন্টার পেইন রিলিফ। এর অর্থ হচ্ছে
প্রাথমিকভাবে ব্যথা কমানোর জন্য আপনি পেইন রিলিফ ঔষধ যেমন
আইবপ্রফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে পারেন। তবে দীর্ঘ সময় ব্যথা
থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া সর্বোত্তম।
কোমর ব্যথা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ
১. সঠিকভাবে বসা এবং চলাফেরা করাঃ সঠিক ভঙ্গিতে
বসা, চলাফেরা করা এবং কাজ করার সময় কোমরের উপর চাপ কমাতে সঠিক পদ্ধতি
অবলম্বন করা উচিত।
২. নিয়মিত ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, ইয়োগা ব্যায়াম
করা, ওজন কমানোর ব্যায়াম, স্ট্রেচিং করা ইত্যাদি করে কোমরের মাংশপেশি কে
মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলা যার ফলে ব্যাথার ঝুঁকে কমে।
৩. ভারি বস্তু তোলার সতর্কতাঃ এক্ষেত্রে যতটা পারা যায় ভারীবস্তু না তোলা।
একান্তই যদি প্রয়োজন হয় তবে কোমরের পরিবর্তে হাঁটুর ব্যবহার করে বস্তুটি তোলা।
ফলে কোমরের ওপর চাপ কম পড়বে।
কোমর ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
বাজারে কোমর ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ওষুধ পাওয়া যায়। ব্যথা কমানোর জন্য পেইন
কিলার সবচেয়ে ভালো কাজ করে থাকে। আপনাদের আজ কিছু ওষুধ এর নাম বলবো যা কোমর
ব্যথা কমানোর জন্য অনেক উপকারী। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ গ্রহণ করা
উচিত নয়।
প্যারাসিটামল: প্যারাসিটামল একটি ব্যথানাশক ওষুধ। মৃদু থেকে মাঝারি
ব্যথার জন্য এই ওষুধটি আপনি গ্রহণ করতে পারেন। প্যারাসিটামল মূলত নিরাপদ
কিন্তু অধিক ডোজ নিলে যকৃত এর ক্ষতি হতে পারে। নন - স্টেরয়েডাল এন্ট্রি - ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs):
আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোফেন বা ডাইক্লোফেনাক কোমর ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার
করা হয়, যা নন - স্টেরয়েডাল এন্ট্রি - ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস। এ ওষুধগুলো
দীর্ঘমেয়াদী খেলে শরীরের ক্ষতি যেমন, আলসার হয়। নার্ভের ব্যথা কমানোর ওষুধ: সায়াতিকা এর সমস্যা হয়ে থাকলে
গ্যাবাপেন্টিন বা প্রেগাবালিন ওষুধ ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এগুলো
নার্ভের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ওপিওয়েডস: ব্যথা অতিরিক্ত বেশি হলে কখনো কখনো ওপিওয়েডস গ্রহণ করা
যেতে পারে। কডিন বা অক্সিকোডন শক্তিশালী ব্যথানাশক ওষুধ। টপিক্যাল এপ্লিকেশন: কিছু কিছু ব্যক্তির জন্য ওষুধ এর বদলে টপিক্যাল
জেল বা ক্রিম যেমন ক্যাপসাইসিন ক্রিম বা ভোলটারেন জেল কার্যকর হতে পারে।
এগুলো ত্বকের উপর ব্যবহার করতে হয় এবং ব্যথা থেকে কিছুটা নিরাময়ও পাওয়া
যায়।
সতর্কতা: যেকোনো ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ নিবেন।
এসব ওষুধ আপনাকে সাময়িক নিরাময় দিতে পারে কিন্তু আপনার রোগের আসল চিকিৎসা
নাহলে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই কোনো ওষুধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই
সতর্ক হোন।
কোমর ব্যথা নিয়ে লেখকের শেষ কথা
কোমর ব্যথা একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা হলেও এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। কোমরে
ব্যথা হলে সেটিকে নিরাময় করার চেষ্টা করুন। আপনার জীবনযাত্রা এবং চলাফেরার
অভ্যাস পরিবর্তন করুন। যদি আপনি দেখেন যে আপনার ব্যথা নিরাময় হচ্ছে না তাহলে
অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।
নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হোন। শরীরের সুস্থতার প্রতি আমাদের সবাইকে সচেতন
হওয়া উচিত। কোনো ছোট রোগকেও অবহেলা করবেন না। আর কোমর ব্যথা যদি দীর্ঘ হয় তাহলে
অবহেলা না করে ডাক্তার এর কাছে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন।
মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url