মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায়

মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কিত সকল প্রকার তথ্য তুলে ধরবো আমাদের আজকের এই ব্লগপোস্টে। সামান্য কিছু সেটিংস পরিবর্তন করে আপনাদের মোবাইলের গতি দিগুণ করে ফেলতে পারেন।

মোবাইলে-সেটিংস-এর-মাধ্যমে-ইন্টারনেটের-গতি-বৃদ্ধির-উপায়

সম্পুর্ন ব্লগে আমাদের সাথেই থাকুন এবং জেনে নিন অনেকগুলি জানা-অজানা তথ্য। মোবাইলের সেটিংস পরিবর্তন করে আপনারাও আমার মতো ইন্টারনেট এর গতি বাড়িয়ে নিতে পারেন।

পেজ সূচিপত্রঃ মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায়

মোবাইল ইন্টারনেট গতি কম হওয়ার কারণ

মোবাইল ইন্টারনেট এর গতি যদি কম হয় এই ৫জি আমলে তাহলে এর থেকে বিরক্তির কারণ আর অন্য় কিছু হতে পারে না। মোবাইল ইন্টারনেট গতি কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। প্রত্তেকের কারণ আলাদা হতে পারে। ইন্টারনেট দ্বারা আমাদের দৈনিন্দিন জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি কাজ করা হয়।

তাই ইন্টারনেট এর এই সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। ইন্টারনেটের এই সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের আগে এই সমস্যার কারণ জানতে হবে। কারণ কোনো সমস্যার সমাধানের পূর্বে যদি সেই সমস্যার কারণ জানা থাকে তাহলে সমাধানের পথটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এবং মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় খুঁজে পাবো।

মোবাইল ইন্টারনেট গতি কমে যাওয়ার কারণ গুলির মধ্যে সবচেয়ে কমন একটি সমস্যা হচ্ছে নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা। বাংলাদেশে এখনও অনেক গুলি জায়গায় সম্পুর্নভাবে ৪জি নেটওয়ার্ক পায়না। যার ফলে ইন্টারনেট ধীর গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে।

এছাড়াও অনেক সময় ইন্টারনেট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় যার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। আরও সমস্যা হতে পারে ডিভাইস এর সীমাবদ্ধতার জন্য। তারপর অনেক সময় সিগন্যাল ট্র্যাফিক বৃদ্ধি পেলে ইন্টারনেট ধীর গতিতে কাজ করে। নেটওয়ার্ক সিস্টেম আপডেট এর কাজ চলার সময়ও এই ধরনের সমস্যা হয়।

একই ধরনের অনেক সমস্যায় অনেককে প্রায়শয় সম্মুখীন করতে হয়। তার মধ্যে হাতে গোনা কমন কয়েকটি সমস্যা আপাতত আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এর বাইরেও অনেক সমস্যা থাকতে পারে যার কারনেও ইন্টারনেট এর গতি কম হতে পারে।

মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান

মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও অনেক পিছিয়ে। অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে যারা প্রত্যেক মাসেই একটি পরিসংখান তৈরি করেন। তাদের পরিসংখান অনুযায়ী বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তূলনামূলকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে।

যেহেতু বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে  অবস্থান আরও উন্নত হতে পারতো। বেশ কিছু কারনে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গতি কম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০ বা এর কাছাকাছি।

এর মূল কারণ গুলির মধ্যে আছে ব্যবহারকারীর উচ্চ চাপ। নেটওয়ার্ক এর দুর্বলতা ইত্যাদি। আমরা যদি ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে বাংলাদেশের গড় গতি ছিল ১৪-১৫ Mbps যা বৈশ্বিক গড় গতির সাথে তূলনা করলে অনেক কম। মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় বের করে এই গতি আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে।

অপরদিকে আমরা উন্নত দেশ গুলি যেমন চীন, কোরিয়া বা ইউরোপিয়ান দেশের গড় গতি যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখা যায় তাদের গড় গতি প্রায় ৫০ Mbps। তাই বাংলাদেশ এর অবস্থান ইন্টারন্যাশনাল প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অনেক পিছিয়ে।

ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য রাউটারের সঠিক অবস্থান কোনটি

ওয়াইফাই ইন্টারনেট এর গতি বৃদ্ধি করতে হলে আপনাকে সবার প্রথমে একটি সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করতে হবে যেখানে আপনি আপনার রাউটার রাখবেন। আপনার রাউটার যদি সঠিক অবস্থানে না রাখেন তাহলে কোনো ভাবেই আপনার ইন্টারনেট এর গতি ভালো পাবেন না।

মোবাইলে-সেটিংস-এর-মাধ্যমে-ইন্টারনেটের-গতি-বৃদ্ধির-উপায়

মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় প্রথমত, আপনার রাউটারের অবস্থান আপনার বাসার মাঝামাঝি কোনো একটি অবস্থানে হতে হবে। তাহলে আপনি আপনার বাসার প্রত্যেকটি স্থানে সমান ভাবে সিগন্যাল পাবেন। এতে করে রাউটার এর ইন্টারনেট প্যাকেট লস কম হবে এবং আপনি স্পিড ভালো পাবেন।
অনেকেই রাউটারের অবস্থান নিয়ে খুব উদাসীন। রাউটার বাসার এক কর্ণারে রাখেন যার ফলে সকল জাইগায় সমান ভাবে এর সিগন্যাল পৌঁছায় না। পরবর্তিতে তারা রাউটার পরিবর্তন করেন এবং দামি রাউটার নিয়ে আসেন। ফলশ্রুতিতে খুব একটা লাভবান হয়না।

রাউটার থেকে সম্পুর্ণ ও সর্বোচ্চ গতি পেতে হলে রাউটার কে বাসার মধ্যবর্তী কোনো স্থানে রাখতে হবে এবং ফ্লোর থেকে ৫-৭ ফুট উচ্চতায় রাখতে হবে। তাহলে একটি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। রাউটারের সিগন্যাল চোঙ আকারে বিসৃত হয়। সেকারনে মাঝামাঝি উচ্চতায় রাখলে সমান ভাবে ইন্টারনেট পাওয়া যায়।

ইন্টারনেট গতি বৃদ্ধি জন্য সেটিংস পরিবর্তন

ইন্টারনেট এর গতি বৃদ্ধির জন্য মোবাইল এর কিছু সেটিংস এবং রাউটার এর কিছু সেটিংস পরিবর্তন করলে গতি বৃদ্ধি করা সম্ভব।সেরকম সহজ কয়েকটি সেটিংস কৌশল আপনাদের এখন জানাবো। যার মাধ্যমে অল্প হলেও আপনার ফলাফল পাবেন। পয়েন্ট আকারে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করছি কৌশলগুলি।

    ১. মোবাইল প্রেফার্ড নেটওয়ার্ক 4G করা। 
    ২. মোবাইল 5G সাপোর্টেড হলে 5G অন রাখা।
    ৩. মোবাইল এর vpn অন থাকলে তা ডিসকানেক্ট করা।
    ৪. ব্রাউজার ক্যাশ ও কুকিই ক্লিয়ার করা।
    ৫. ফোন অটো আপডেট বন্ধ রাখা।
    ৬. মাঝে মাঝে নেটওয়ার্ক হ্যাং হয়ে যায় তাই ফোন রিস্টার্ট করা।

রাউটার এর ক্ষেত্রেও আমরা কিছু সেটিংস পরিবর্তন করতে পারি। যেমন:
 
    ১. রাউটারের আশেপাশে মেটাল বাধা কম রাখা।
    ২. রাউটার এর চ্যানেল পরিবর্তন করা অর্থাৎ 2.5GHz থেকেই 5Hz এ ব্যবহার করা।
    ৩. রাউটার সেটিংস এ গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস অফ করুন।
    ৪. রাউটার এর অ্যাপস থেকে নিজের ডিভাইসটা প্রায়োরিটি মোড অন করে দিন। 
    ৫. অপারেটর এর সাথে কথা বলে মাঝেমধ্যে ম্যাক ক্লিয়ার করিয়ে নিন।

ইন্টারনেট এর স্পিড চেক করবো কিভাবে

ISP (internet service provider) হলো তারা যারা আপনার ইন্টারনেট সেবার মান ও গতি নিশ্চিত করে। তাই ইন্টারনেট স্পিড কম হলে অবশ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে তারা আপনাকে সঠিক ইন্টারনেট গতির সেবা প্রদান করছে কি না।

মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় জানার পুর্বেই আপনার ISP আপনাকে কি প্রতিশ্রুত নেটওয়ার্ক সেবা দিচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য কিছু উপযুক্ত ইন্টারনেট স্পিড টেস্টিং টুলস রয়েছে। যা ব্যবহার করে আপনারা জানতে পারবেন আপনার ইন্টারনেট স্পিড কেমন। স্পিড যদি আপনার প্রত্যাশিত না হয় তবে আপনার ISP এর সাথে যোগাযোগ করে ইন্টারনেট স্পিড ঠিক করে নিতে হবে। চলুন কয়টি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত ইন্টারনেট স্পিড টেস্টিং টুলস জেনে নেই,

১. Speedtest.com

২. Fast.com

৩. OVH.net

DNS সার্ভার পরিবর্তন করলে কি ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো যায়

DNS সার্ভার পরিবর্তন করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং উন্নত করা যায়। DNS সার্ভার মূলত ডোমেইন নাম গুলো নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ এটি ডোমেইন নামকে IP এড্রেস এ পরিবর্তন করে। চলুন এখন DNS সার্ভার পরিবর্তন করে মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় জেনে নি।

বাংলাদেশের-ইন্টারনেট-স্পিড-কীভাবে-বাড়াবেন

DNS সার্ভার ব্যবহার করে ইন্টারনেট এর গতি সরাসরি বৃদ্ধি করা যায়না। তবে DNS সার্ভার এর কিছু সুবিধা রয়েছে। DNS সার্ভার ব্যবহার করে ব্রাউজার এর ব্রাউজিং স্পিড বাড়ানো যায়। এছাড়াও কিছু কিছু কিছু ক্ষেত্রে DNS সার্ভার ব্যবহার করে স্ট্যাবিলিটি বৃদ্ধি করা যায়।
তারপর অনেক অঞ্চলে কিছু কিছু সাইট ব্লক করা থাকে। DNS সার্ভার পরিবর্তন করে সেই ব্লক সাইট এর অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। DNS সার্ভার পরিবর্তন করে গতির কিছু তারতম্য পাওয়া গেলেও খুব একটা লাভবান হওয়া যায় না। 

ইন্টারনেট এর গতি বৃদ্ধির জন্য অপারেটরের সাথে যোগাযোগ

দীর্ঘমেয়াদি ইন্টারনেট এর গতি সমস্যার জন্য সর্বোত্তম হয় মোবাইল অপারেটর এর সাথে যোগাযোগ করা। মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় এর একটি অন্যতম অংশ এই অপারেটর এর সাথে যোগাযোগ। 

অপারেটর এর সাথে যোগাযোগ করে আপনি আপনার সমস্যার কথা গুলি জানান। আপনি তাদের সাথে যে সকল সাহায্য চাইতে পারেন তা হলোঃ

১. আপনি টেকনিক্যাল সাপোর্ট চাইতে পারেন।
২. আপনি আপনার ইন্টারনেট এর মেয়াদ সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন।
৩. আপনার এলাকায় যদি সিগন্যাল জনিত কোনো সমস্যা থাকে তবে সেই নিয়ে কথা বলতে পারেন।
৪. সিগন্যাল কভারেজ পুরোপুরি না থাকলে তা সম্পর্কে জানান। দ্রুত তাড়া আপনার সমস্যার সমাধান করে দিবে।
৫. নেটওয়ার্ক আপডেট করতে বলতে পারেন।

মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেট গতি বৃদ্ধি নিয়ে লেখকের বক্তব্য

মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে এই শেষ অংশে বলতে চাই বাংলাদেশের ইন্টারনেট অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে আসলেই অনেক কম। যা মেনে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। এটাই আসল বাস্তবতা। 

তবে কম গতির মধ্যেও কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে আমাদের ইন্টারনেট এর গতি আরও কমে যায়। যা খুবই বিরক্তির একটি কারণ আমাদের দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে। আমরা আমাদের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট ব্যবহার করি।

এই জন্যই আমাদের আজকের এই ব্লগটি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা, যারা দৈনন্দিন এর এই ইন্টারনেট সমস্যায় ভুগছেন। তাদের জন্য সুখবর এই যে আমাদের এই পোস্ট পড়ার পর তাদের ইন্টারনেট এর গতি হবে দ্বিগুণ। এই পোস্টে মোবাইলে সেটিংস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় বলা হয়েছে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাই আর্টিকেল কুইল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url